আয়কর ফাইলে ত্রুটি থাকলে ৬ বছর পর্যন্ত বিপদ থাকতে পারে

আমরা প্রতিনিয়ত যারা বাজার করি বিশেষ করে কোনো উপলক্ষে যখন বাজার করা হয়, তখন সাধারণত ফর্দ বা তালিকা তৈরি করে নিয়ে যাই। ফর্দ ছাড়া বাজারে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই কিছু না কিছু ফেলে আসি। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন তৈরিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অনেক ক্ষেত্রেই আমরা গোছাতে পারি না। একেবারে শেষ সময়, কোভিডের কারণে এবং রিটার্ন তৈরির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার ব্যস্ততার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ বা ছাড়াই রিটার্ন তৈরি হলে তা ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার পরও ফাইল আবার উন্মোচন হতে পারে। আয়কর আইনে ছয় বছর পর্যন্ত আয়কর ফাইল পুনরায় উন্মোচন করা যায়। অর্থাৎ আয়কর ফাইলে ত্রুটি থাকলে বিপদ থাকবে ছয় বছর পর্যন্ত।

এ ক্ষেত্রে ২০২০-২১ কর বছরের জন্য ১ জুলাই ২০১৯ থেকে ৩০ জুন ২০২০ তারিখের মধ্যে সংঘটিত কার্যক্রমের কাগজ দলিলাদি কি না, বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য যা যা দরকার:

আয়ের বিবরণী
১. বেতন খাতে আয় (ফটোকপি সংযুক্ত করবেন)
২. সিকিউরিটির ওপর সুদ খাতে আয় (উপযুক্ত কর্মকর্তা কর্তৃক ইস্যুকৃত বেতন সার্টিফিকেট, অর্জিত সুদের সপক্ষে ব্যাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট)
৩. গৃহ সম্পত্তি খাতে আয়
ক. গৃহের তলাভিত্তিক ফ্লোর স্পেস ও ভাড়া (ভাড়ার চুক্তিপত্র)
খ. পৌরকরের পরিমাণ (পৌরকর প্রদানের রসিদ)
গ. বন্ধকি ঋণের ওপর সুদ (ব্যাংকের ইস্যুকৃত বিবরণী বা সার্টিফিকেট)
ঘ. বাসস্থান খালি থাকলে তার সময়কাল (উপকর কমিশনারকে জানানো হলে পত্রের কপি)
৪. কৃষি আয়
ক. কৃষিজমির পরিমাণ খ. ফলনকৃত শস্যের পরিমাণ
গ. বাজারমূল্য
৫.ব্যবসা বা পেশা খাতে আয়: (স্থিতিপত্র ও আয়-ব্যয়ের বিবরণী, যদি থাকে)
৬. মূলধনি লাভ
ক. মূলধনি সম্পদের বিক্রয়মূল্য (বিক্রীত চুক্তিপত্র ও বিক্রয়ের রসিদ বা দলিল)
খ. বিক্রীত সম্পদের ক্রয়মূল্য (ক্রয়ের দলিল অথবা প্রমাণপত্র)
গ. আনুষঙ্গিক মূলধনি ব্যয় (ক্রয় ও আনুষঙ্গিক মূলধনি ব্যয়ের প্রমাণপত্র)
৭. অন্যান্য উৎস খাতে আয়
ক. লভ্যাংশ (ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট)
খ. সুদ (সার্টিফিকেট সুদের ওপর উৎসে কর কর্তনের এবং ব্যাংক বিবরণী)
গ. অন্য কোনো উৎস (আয়ের সপক্ষে প্রমাণপত্র)
ঘ. এফডিআর বা সঞ্চয় (বিবরণী/সার্টিফিকেট)

কর রেয়ায়েতের জন্য বিনিয়োগ
ক. জীবনবিমার প্রদত্ত কিস্তি (প্রিমিয়ার রসিদ)
খ. ভবিষ্যতে প্রাপ্য বার্ষিক ভাতাপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যে চাঁদা (উপযুক্ত কর্মকর্তা কর্তৃক ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট)
গ. ভবিষ্য তহবিল আইন, ১৯২৫ অনুযায়ী প্রযোজ্য ভবিষ্য তহবিলে প্রদত্ত চাঁদা (সার্টিফিকেটের ফটোকপি)
ঘ. স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে স্বীয় ও নিয়োগকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত চাঁদা (সার্টিফিকেটের ফটোকপি)
ঙ. অনুমোদিত বয়সজনিত তহবিলে প্রদত্ত চাঁদা (নিয়োগকর্তার সার্টিফিকেট)
চ. অনুমোদিত ঋণপত্র বা ডিবেঞ্চার স্টক, স্টক বা শেয়ারে বিনিয়োগ (বিনিয়োগের প্রমাণপত্র)
ছ. ডিপোজিট পেনশন স্কিমে প্রদত্ত চাঁদা (ব্যাংকের সার্টিফিকেট সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ অনুমোদনযোগ্য)
জ. কল্যাণ তহবিলে প্রদত্ত চাঁদা এবং গোষ্ঠী বিমা স্কিমের অধীন প্রদত্ত কিস্তি (নিয়োগকর্তার সার্টিফিকেট)
ঝ. জাকাত তহবিলে প্রদত্ত চাঁদা (প্রমাণপত্র)
ঞ. অন্যান্য, যদি থাকে (বিবরণ দিন ও প্রমাণপত্র)
রিটার্ন তৈরি করে স্বাক্ষর করার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আয়কর রিটার্নের সঙ্গে সংযুক্ত করার পর

রিটার্নসহ কাগজপত্রের ফটোকপি করে ফাইলে সংরক্ষণ করুন। তাহলে পরবর্তী রিটার্ন তৈরি করা এবং যদি কোনো কারণে আয়কর ফাইল অডিটে নির্বাচিত হয় বা কোনো তদন্ত করা হয়, সে ক্ষেত্রে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করতে সুবিধা হবে।

“ট্রেড লাইসেন্স” কি? কেন প্রয়োজন? এবং সংগ্রহ করার পদ্ধতি !

সিটি কর্পোরেশন কর বিধান – ১৯৮৩ এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ট্রেড লাইসেন্সের সুচনা ঘটে। এই লাইসেন্স উদ্যোক্তাদের আবেদনের ভিত্তিতে প্রদান করা হয়ে থাকে। ব্যবসার প্রথম এবং অবিচ্ছেদ্য একটি ডকুমেন্ট হচ্ছে ট্রেড লাইসেন্স (Trade License), আমাদের দেশে এমন অনেক সফল উদ্যোক্তা/ব্যবসায়ী আছেন যারা ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করছেন কিন্তু এটা সম্পুর্ণ অবৈধ এবং বেআইনী। Trade মানে হচ্ছে ব্যবসা আর License মানে হচ্ছে অনুমতি অর্থাৎ ট্রেড লাইসেন্স মানে হচ্ছে ব্যবসার অনুমতিপত্র। এই ট্রেড লাইসেন্স বাংলাদেশ সরকার সিটি কর্পোরেশন কর বিধান – ১৯৮৩ (City Corporation Taxation Rules, 1983) এর অধিনে ইস্যু করে থাকে। যেহেতু এই ট্রেড লাইসেন্স সরকারী প্রতিষ্ঠান হতে ইস্যু করা হয় তাই আপনার ব্যবসার বৈধতার প্রতিক হচ্ছে এই ট্রেড লাইসেন্স।

☛ কোন জায়গা/প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রেড লাইসেন্স করতে হয়?
সিটি করর্পোরেশন,পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এই লাইসেন্স প্রদান করা হয়ে থাকে।

☛ কিভাবে ট্রেড লাইসেন্স করতে হয়?
নির্ধারিত আবেদন ফর্মে ট্রেড লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করতে হয়। উদ্যোক্তার আবেদনের ভিত্তিতে এই লাইসেন্স প্রদান করা হয়ে থাকে। আবেদন ফরম এর সাথে উদ্যোক্তাকে কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হয়। ব্যবসার ধরনের উপর ভিত্তি করে ট্রেড লাইসেন্স এর আবেদন এর সাথে কি কি কাগজ পত্র জমা দিতে হবে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিবেন। নিম্নে বিভিন্ন প্রকার ব্যবসার জন্য কি কি ধরনের কাগজপত্র প্রয়োজন হতে পারে তার একটি তালিকা দেয়া হলো:

ট্রেড লাইসেন্স করতে কী কী কাগজপত্র জমা দিতে হয়?
প্রশ্নঃ ট্রেড লাইসেন্স করতে যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হয় তার তালিকাঃ
ক) সাধারণ ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স এর ক্ষেত্রে:

১. নির্দিষ্ট আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে।
২. ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর স্থান ব্যক্তিগত হলে সিটি কর্পোরেশনের হালনাগাদ হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ, নিজের দোকান হলে ইউটিলিটি বিল এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাড়ায় হলে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে ভাড়ার চুক্তিপত্রে সত্যায়িত ফটোকপি।
৩. প্রতি আবেদনকারীর ৪ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৪. ব্যবসা যদি যৌথভাবে পরিচালিত হয় তাহলে ২০০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে পার্টনার শিপের অঙ্গীকারনামা/শর্তাবলী জমা দিতে হবে।
৫ ভোটার আইডী কার্ড

খ) ফ্যাক্টরির ট্রেড লাইসেন্স এর ক্ষেত্রে (in case of a Factories):

১) পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের কপি।
২) প্রস্তাবিত ফ্যাক্টরি/কারখানার পার্শ্ববর্তী অবস্থান/স্থাপনার বিবরণসহ নকশা/লোকেশন ম্যাপ।
৩) প্রস্তাবিত ফ্যাক্টরি/কারখানার পাশ্ববর্তী অবস্থান/স্থাপনার মালিকের অনাপত্তিনামা।
৪) ফায়ার সার্ভিস এর ছাড়পত্র।

গ) সি.এন.জি ষ্টেশন/দাহ্য পদার্থ ব্যবসার ক্ষেত্রে (CNG Station / Combustible Materials Business) বিস্ফোরক অধিদপ্তর/ ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র/অনুমতিপত্র।

ঘ) ক্লিনিক/প্রাইভেটহাসপাতালএর ক্ষেত্রে (in case of Clinic / Private Hospitals)
ডিরেক্টর জেনারেল – স্বাস্থ্য, কর্তৃক অনুমতিপত্র।

ঙ) লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে (In Case of Limited Company) কোম্পানির মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেল অথবা সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন।

চ) প্রিন্টিং প্রেস এবং আবাসিক হোটেল এর ক্ষেত্রে (in case of Printing Press and Residential Hotel) ডেপুটি কমিশনার, কর্তৃক অনুমতিপত্র।

ছ) রিক্রুটিং এজেন্সির ক্ষেত্রে (In case of Recruiting Agencies) মানব সম্পদ রপ্তানী ব্যুরো কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স।

জ) অস্ত্র ও গোলাবারুদ এর ক্ষেত্রে (In case of Weapons and Ammunition) অস্ত্রের লাইসেন্স।

ঝ) ঔষধ ও মাদকদ্রব্যের ক্ষেত্রে (In case of Medicines and Drugs Case) ড্রাগ লাইসেন্স এর কপি।

ঞ) ট্রাভেলিং এজেন্সির ক্ষেত্রে (In case of Travel Agencies) সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অনুমতি।

☛ এইবার থাকছে ট্রেড লাইসেন্স সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর পর্ব:

প্রশ্ন ১ : কোন কোন ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয়?
উত্তর: বলতে গেলে সব ব্যবসা ও স্বাধীন পেশার জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয়। এমনকি ফুটপাতে বসে যিনি তালপাতার পাখা বিক্রি করবেন। অথবা যিনি ঠেলাগাড়ি চালান তার জন্যও আইন মোতাবেক ব্যবসায়িক লাইসেন্স নিতে হবে। আমাদের দেশে আইনের শাষন নেই বিধায় অনেকে জিনিসটা গুরুত্ব দেয়না। কিন্তু নামকরা কোম্পানীগুলো ট্রেড লাইসেন্স নেই এমন কারো সাথে ব্যবসা করতে চায়না।

প্রশ্ন ২ : ট্রেড লাইসেন্স আর কি কি কাজে লাগে?
উত্তর: অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একটি প্রশ্ন। আমাদের ন্যাশনাল আইডি কার্ড যেমন ভোটদান ছাড়াও নানা কাজে লাগে তেমনি ট্রেড লাইসেন্স ব্যবসায়িক নানা কাজে লাগে। বলতে গেলে প্রতি পদে পদে এর প্রয়োজন হয়।
১. মনে রাখবেন ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব দিয়ে আপনি ব্যবসায়িক লেনদেন করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া আপনি ব্যবসায়িক হিসাব বা কারেন্ট একাউন্ট খুলতে পারবে না। এক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স এর বিকল্প নেই।
২. অনেক সময় ব্যবসার শুরুতে বা কোনো পর্যায়ে ব্যাংক লোন দরকার হতে পারে। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া আপনি ব্যাংক লোন এর কথাই ভাবতেই পারবেন না।
৩. ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যবসা করতে হলে তারা আপনার ট্রেড লাইসেন্স আছে কিনা তা দেখতে চাইবে।
৪. কোনো ব্যবসায়িক এসোসিয়েশন এর সদস্য হতে হলে আপনার ট্রেড লাইসেন্স অবশ্যই লাগবে।
৫. এছাড়া ভ্যাট ও টিন এর জন্যও ট্রেড লাইসেন্স অপরিহার্য। তাছাড়া আরো অনেক কাজে এর প্রয়োজন পড়ে।

প্রশ্ন ৩ : লিমিটেড কোম্পানির ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগে?
উত্তর:
ক. ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের স্থানটি নিজের হলে সিটি করপোরেশনের হালনাগাদ করের রসিদ এবং ভাড়ায় হলে ভাড়ার চুক্তিপত্র বা রসিদ আবেদনপত্রের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।
খ. এ ছাড়া আবেদনপত্রের সঙ্গে তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নির্ধারিত নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা দাখিল করতে হবে।
গ. প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি লিমিটেড হলে মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেলস ও সার্টিফিকেট অব ইনকরপোরেশন দিতে হবে।
ঘ. জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি
ঙ. টিন সার্টিফিকেট
চ. বাড়ির ইউটিলিটি বিলের কপি
ছ. যে বাড়ীতে ব্যবসায় পরিচালনা করছেন তার হোল্ডিং ট্যাক্স হালনাগাদ করনের রশিদ।

প্রশ্ন ৪ : ট্রেড লাইসেন্স করাতে কেমন খরচ পড়ে?
উত্তর : ব্যবসায়ের ধরন অনুসারে ট্রেড লাইসেন্স এর ফি নির্ধারন হয়। তবে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এর অধীনে ব্যবসায়ের ধরন অনুসারে ৫শ টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ফি নির্ধারন করা আছে। আইটি, সফটওয়ার বা জেনারেল সাপ্লায়ার হিসেবে কম বেশী ৫ হাজার সরকারি ফি নির্ধারন করা আছে। সাথে ১৫%ভ্যাট সহ আরো আনুষাঙ্গিক খরচ যোগ হবে।

প্রশ্ন ৫ : ই-কমার্স ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স এর জন্য খরচ কেমন?
উত্তর: ট্রেড লাইসেন্স এর ব্যবসায়িক তালিকায় এখনো ই কমার্স যুক্ত হয়নি। আইটি বেজড স্টার্টআপ ক্যাটাগরিতে এখনো ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা হয়না। তবে আইটি অথবা সফটওয়ার ক্যাটাগরিতে লাইসেন্স নিয়ে অনেকেই ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনা করছেন । এজন্য সরকারি ফি ৩০০০ টাকা থেকে ৫০০০টাকা। কিন্তু অন্যান্য খরচ যেমন সাইনবোর্ড ট্যাক্স, বই, ১৫% ভ্যাট সহ আরো সংশ্লিস্ট খরচ মিলিয়ে এটা ৯০০০-১০০০০ হাজারে গিয়ে ঠেকে।

প্রশ্ন ৬ : কোথায় গিয়ে ট্রেড লাইসেন্স করাতে হয়?
উত্তর: আপনি সরাসরি সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভায় অথবা ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে গিয়ে ট্রেড লাইসেন্স করাতে পারেন। তবে আজকাল অনেক কনসালটেন্সি ফার্ম আছে যারা নির্দিস্ট সার্ভিস চার্জ এর বিনিময়ে এসব কাজ করে দিয়ে থাকে। নিজে কোন প্রকার ভুল বা ঝামেলা পোহাতে না চাইলে ইলিয়াস এন্ড এসোসিয়েটস এর হেল্প নিতে পারেন।

প্রশ্ন ৭ : ব্যবসা শুরুর কয়েক মাস পর ট্রেড লাইসেন্স করালে চলবে কি?
উত্তর: এটা নির্ভর করছে আপনার ব্যবসার পরিধি কতটুকু তার উপর। পাড়ার অনেক দোকানদার ১০ বছর পরেও  ট্রেড লাইসেন্স করেছে। কেউ হয়তো সারাজীবনেও ট্রেড লাইসেন্স করেনি। আপনি যদি সাধারণ মানুষের সাথে কাজ করেন তাহলে জরুরী নয়। বড়ো ব্যবসায়ীদের সাথে কাজ করতে গেলে ট্রেড লাইসেন্স জরুরী। তবে ট্রেড লাইসেন্স হচ্ছে আপনার ব্যবসার অনুমতি পত্র। আপনি কাজ শুরু করে দিন যখনি প্রয়োজন হবে ট্রেড লাইসেন্স করে নেবেন।

প্রশ্ন ৮ : আমি ব্যবসা করি রংপুরে, কিন্তু কাস্টমার সব ঢাকায় এখন রংপুর থেকে ঢাকায় মাল পাঠাতে হলে কোথায় এবং কয়টা ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে?
উত্তর: যেখানে আপনার অফিস বা ব্যবসার ঠিকানা শুধু সেখানেই ট্রেড লাইসেন্স নেবেন। তবে ঢাকায় যদি আরেকটা অফিস নেন। তখন সেখানে আরেকটা ট্রেড লাইসেন্স এর প্রশ্ন আসবে। কিন্তু ব্যবসা করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স কোনো বাঁধা নয়।

প্রশ্ন ৯ : ট্রেড লাইসেন্স করার পর কোনো প্রয়োজনে নাম ঠিকানা পরিবর্তন করা যায় কি?
উত্তর: ফি প্রদান ও এফিডেবিটের মাধ্যমে যেকোনো তথ্য পরিবর্তণ করা যায়।

প্রশ্ন ১০ :একটি ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে কি বিভিন্ন ধরনের পন্য বা ব্যবসা করা যায়?
উত্তর: বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা একটা ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে করা যায়না। তবে বিভিন্ন রকমের পন্য বিক্রি করা যায়। সেক্ষেত্রে ক্যাটাগরি হবে জেনারেল সাপ্লায়ার।

প্রশ্ন ১১ : একই নামে কি একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে?
উত্তর: হ্যাঁ পারে, তবে আপনি যদি চান যে আপনি যে নামে প্রতিষ্ঠান করবেন সে নামে যেন আর কেউ না করে, অথবা আপনার নামটা যেন কারো সাথে মিলে না যায়। সেক্ষেত্রে আপনাকে লিমিটেড কোম্পানীর রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। তখন প্রথমেই তারা তল্লাশি দিয়ে দেখে নেবে যে আপনার প্রস্তাবিত নামে আরো কোনো কোম্পানী আছে কিনা?

প্রশ্ন ১২ : ট্রেড লাইসেন্স কি দ্বৈত হতে পারে?
উত্তর: হ্যাঁ পারে, সেক্ষেত্রে দুজনেরই ছবি, আইডি কার্ড ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য দরকার হবে।

প্রশ্ন ১৩ : একজন ব্যক্তির কি একাধিক ট্রেড লাইসেন্স থাকতে পারে?
উত্তর: একজন ব্যক্তির একাধিক ট্রেড লাইসেন্স থাকতে পারে, এবং সেটা একই ঠিকানায় হতে পারে, এবং একাধিক ঠিকানায় হতে পারে।

প্রশ্ন ১৪ : গ্রাম থেকে ই কমার্স চালালেও কি ট্রেড লাইসেন্স লাগবে?
উত্তর: যে কোনো স্থান থেকে যে কোনো ব্যবসার আইনগত বৈধতার জন্য ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন। আপনি যদি লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করেন সাধারণত কেউ আপনাকে দাবড়াবেনা, কিন্তু সেটা বেআইনী। তবে লাইসেন্সটা থাকলে বিপদে আপদে কাজে লাগবে। তবে গ্রামে কিন্তু খুব অল্প টাকা দিয়েও ট্রেড লাইসেন্স করা যায়।

প্রশ্ন ১৫ : একটি ট্রেড লাইসেন্স এর মেয়াদ কতদিন? মেয়াদ পূর্ণ হলে কি করতে হবে?
উত্তর: একটি ট্রেড লাইসেন্স এর মেয়াদ এক অর্থ বছর। মেয়াদ শেষ হলে আপনাকে নবায়ন ফি দিয়ে নবায়ন করে নিতে হবে। তবে নবায়ন না করলে যে আপনার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে তা নয়। বিষয়টা হলো নবায়ন করলে আপনার একটা আইনগত বৈধতা থাকলো।

প্রশ্ন ১৬ : একটি ট্রেড লাইসেন্স কি একাধিক ব্যবসায় ব্যবহার করা যায় ?
উত্তর: না একটি ট্রেড লাইসেন্স শুধু মাত্র একটি ব্যবসার জন্যই প্রযোজ্য অর্থাৎ যে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ট্রেড লাইসেন্সটি করা হয় শুধু সেই ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা যাবে অন্য কোন ধরনের ব্যবসার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। নতুন কোন ব্যবসা শুরু করলে তার জন্য নতুন ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে।

প্রশ্ন ১৭ : একটি ট্রেড লাইসেন্স কি একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার করতে পারবেন ?
উত্তর: না একটি ট্রেড লাইসেন্স শুধু মাত্র একজন ব্যবসায়ী/উদ্যোক্তা ব্যবহার করতে পারবেন অর্থাৎ যে ব্যবসায়ী/উদ্যোক্তার নামে ট্রেড লাইসেন্সটি করা হয়েছে এটি শুধু তার জন্যই প্রযোজ্য। এটা কোনভাবেই হস্তান্তর যোগ্য নয়।

প্রশ্ন ১৮ : ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে এবং কোথা থেকে নবায়ন করতে হয় ?
লাইসেন্স নবায়ন একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। একটি লাইসেন্সের মেয়াদ এক বছর এবং এর মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে আবেদন করতে হবে। এ জন্য আগের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক কর কর্মকর্তা নবায়নকৃত লাইসেন্স প্রদান করবেন। লাইসেন্স নবায়ন ফি নতুন লাইসেন্স ফির সমান। এই ফি আগের মতোই ফরমে উল্লিখিত ব্যাংকে জমা দিতে হবে।

ভুল সংশোধনী রিটার্ন কিভাবে জমা দিবেন?

ব্যক্তি করদাতা সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিল করে থাকেন। দাখিলের সময় করদাতাকে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র দেয়া হয়। এবং এটাই কর নির্ধারনী আদেশ বলে গণ্য হয়।

রিটার্ন দাখিলের পর করদাতা যদি জানতে পারেন তার রিটার্নে অনিচ্ছাকৃত ভুলে কম আয় প্রদর্শন বা কম কর প্রদান করা হয়েছে, বেশি রেয়াত নেয়া হয়েছে, অথবা অন্য কোন কারনে কোন অংশ কম পরিশোধ বা পরিগণনা করা হয়েছে তাহলে করদাতা নিজ থেকে উপ-কর কমিশনারের বিবেচনার জন্য একটি ভুল সংশোধনী রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।

তবে ভুল রিটার্ন দাখিল করতে গেলে নিচের শর্তগুলো পালন করতে হবেঃ

১। ভুল সংশোধনী রিটার্নের সাথে ভুলের ধরন ও কারন উল্লেখপূর্বক লিখিত বিবরণী দাখিল করতে হবে।

২। যে পরিমান কর কম পরিশোধ করা হয়েছে তার সাথে মাসিক ২% করে সুদ ভুল সংশোধনী রিটার্ন দাখিলের আগে বা দাখিলের সময় পরিশোধ করতে হবে।

৩। ভুল সংশোধনী রিটার্নে “৮২বিবি(৫) ধারায় দাখিলকৃত” কথাটি উল্লেখ থাকতে হবে।

এখন ভুল সংশোধনী রিটার্ন দাখিলের পর উপ-কর কমিশনার যদি সন্তুষ্ট হন যে সকল শর্ত পালন করেই রিটার্ন দাখিল করা হয়েছে তাহলে তিনি রিটার্ন গ্রহণ করবেন। এবং একটি প্রাপ্তি স্বীকারপত্র ইস্যু করবেন যেখানে লেখা থাকবে “৮২বিবি(৫) ধারায় জমা গ্রহণ করা হল”।

তবে আপনাকে ভুল সংশোধনী রিটার্ন অবশ্যই স্বনির্ধারনী রিটার্ন দাখিলের ১৮০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে হবে। আবার মূল রিটার্নটি যদি অডিটে পরে যায় তাহলে আর ভুল সংশোধনী রিটার্ন দাখিল করা যাবে না বা দাখিল করলেও তা গ্রহনযোগ্য হবে না।

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় শেষ দিকে তাড়াহুড়া করে রিটার্ন দাখিল করতে গিয়ে কিছু তথ্য বাদ পরে যায়। মনে না থাকার কারনে এমন হয়। আবার সারা বছরের হিসেব যেহেতু আয়কর রিটার্নে দাখিল করতে হয় তাই এটাও একটা কঠিন কাজ।

অনেকেই সারা বছর ধরে আয়-ব্যয় খাতায় লিখে রাখেন না। তাই মনে রাখাও সম্ভব হয়না।

বিশেষত, বিশেষ কিছু আয় বা খরচ লিখে রাখা জরুরি। যারা লিখে রাখেন তাদের ক্ষেত্রে রিটার্ন তৈরি করা সহজ হয়ে যায়। তাই রিটার্ন তৈরির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল হাতে সময় নিয়ে রিটার্ন তৈরি করা। তাহলেই ভুলের পরিমান অনেকাংশে কমে যাবে।

দেশের বাইরে বসবাসকারী ব্যক্তি কিভাবে আয়কর দিবেন?

কোন বাংলাদেশী যদি কাজের জন্য দেশের বাইরে থাকেন এবং তার যদি বাংলাদেশে করযোগ্য আয় থেকে থাকে তাহলে তাকে আয়কর দিতে হবে।

এখন প্রশ্ন হলো তিনি যে দেশের বাইরে থাকেন সেখানকার আয়ের জন্য কি আয়কর দিতে হবে?

এর উত্তর হলো সে দেশে উপার্জিত আয় যদি তিনি দেশে নিয়ে আসেন তাহলে আয়কর রিটার্ন-এ তাকে সেই আয় দেখাতে হবে। যদি তার দেশের বাইরে উপার্জিত আয় দেশে না নিয়ে আসেন তাহলে তা আয়কর রিটার্নে দেখাতে হবে না এবং তার জন্য তাকে কোন আয়কর দিতে হবে না।

দেশের বাইরে উপার্জিত আয় তিনি যদি দেশের প্রচলিত আইন মেনে নিয়ে আসেন তাহলে তার উপর তাকে আয়কর দিতে হবে না। এখানে প্রচলিত আইন বলতে সাধারণত আমরা বুঝে থাকি ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশে অর্থ নিয়ে আসা।

এখন তিনি যদি এই মাধ্যম ছাড়া অন্য কোন উপায়ে টাকা নিয়ে আসেন তাহলে তার উপর আয়কর দিতে হবে কিনা?

প্রথম কথা হলো আয়কর তো দিতে হবেই এর বাইরে তিনি অন্য যেভাবেই নিয়ে আসেন না কেন তা হয়তো হুন্ডির মধ্যে পরে যাবে। যেটা অবৈধ। এর জন্য আইনি ঝটিলতাও সৃষ্টি হতে পারে।

তাই বৈধ পথে বিদেশে অর্জিত টাকা নিয়ে আসাটাই ঝামেলামুক্ত এবং তা আয়কর রিটার্নে দেখিয়ে কর দেয়া থেকে মুক্তও থাকা যায়।

কিভাবে আয়কর প্রদান করবেন?

আপনি থাকেন দেশের বাইরে। কিন্তু আপনার কিছু আয় বাংলাদেশেও হচ্ছে যা করযোগ্য। তাই আপনাকে বাধ্যতামূলকভাবে আয়কর দিতে হবে।

এখন কিভাবে আয়কর পরিশোধ করবেন?

প্রথম কথা হলো আপনার বাংলাদেশে যে যে খাতে আয় হচ্ছে তা নির্ণয় করে আয়কর রিটার্ন ফর্ম পূরণ করুন। তার উপর আপনার করদায় কতো তা নির্ণয় করুন।

যারা দেশের বাইরে থাকেন কিন্তু আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আসতে পারেন না তারা যে দেশেই থাকেন না কেন সে দেশে বাংলাদেশী দূতাবাস বা মিশনে তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।

তাই আপনি আপনার রিটার্ন ভালো মতো পূরণ করে দরকারি কাগজপত্র সাথে নিয়ে আপনার কাছাকাছি বাংলাদেশী দূতাবাস বা মিশনে গিয়ে আপনার আয়কর রিটার্ন দাখিল করে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সিং থেকে অর্জিত আয়ের জন্য কি আয়কর দিতে হবে?

আপনি কি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন? অনলাইন ট্রান্সফারের মাধ্যমে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রা জমা হয়? এখন আপনি ভাবছেন এই অর্জিত আয়ের উপর আপনাকে আয়কর দিতে হবে কিনা বা এই আয় আপনার আয়কর বিবরণীতে কিভাবে দেখাবেন? এই প্রশ্নগুলো শুধু আপনার একার নয়। আপনার মতো যারা অনলাইনে বাইরের কাজ করে আয়  করছেন, তাদের সবারই।

ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কারা কাজ করে থাকেন?

এক তথ্য মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ৬,০০,০০০ ফ্রিল্যান্সার আছেন এবং  ৫০০ ই-কমার্স ওয়েবসাইট আছে।  তাদের প্রতি বছরে আয়ের অংক বিশাল। ২০১৩ সালের হিসেব মতে কেবল আপওয়ার্ক ওয়েবসাইটেই বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সার কাজ করে আয় করেছেন ২১ মিলিয়ন ইউএস ডলার।

বুঝতেই পারছেন কতো বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করেছেন আমাদের দেশের তরুণ ফ্রিল্যান্সাররা যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ এর মধ্যে। ফ্রিল্যান্স হিসেবে কাজের সুবিধা হলো দিনের যেকোন সময় শুধু একটি কম্পিউটার এবং সাথে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই বাইরের দেশের যে কোন কাজ করা যায়। তবে ইংরেজি জানাটা খুবই দরকার। যেহেতু বাইরের দেশের ক্লাইন্টের সাথে যোগাযোগটা ইংরেজিতেই করতে হয়।

একজন ছাত্র যেমন তার পড়ালেখার ফাকে কাজ করতে পারেন আবার তেমনি একজন গৃহিণীও তার বাসার কাজের ফাকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে বাড়তি আয় করতে পারেন। আর যারা বেকার তারা চাইলে সারাদিনই ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটগুলোতে কাজ করে আয় করতে পারেন। বাংলাদেশে যারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন তাদের কাছে জনপ্রিয় হলো আপওয়ার্ক এবং ফিভর।

ফ্রিল্যান্সার টাকা তুলতে গেলে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হন?

এখন প্রশ্ন হলো কাজ করে দেশে টাকা নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু অনলাইনে টাকা আছে। ব্যাংক থেকে সেই টাকা তুলতে গেলে প্রায়ই সমস্যায় পড়ে থাকেন বলে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যারা কাজ করেন তারা অভিযোগ করে থাকেন। এতো পরিশ্রম করার পর ব্যাংক থেকে টাকাটা দ্রুত উত্তোলন করতে চাইবেন এটাই স্বাভাবিক।

বাংলাদেশে যারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন তারা মূলত যে অনলাইন গেটওয়ের মাধ্যমে বা মাধ্যম ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রা পেয়ে থাকেন তার সবগুলো বাংলাদেশে অনুমোদিত না। তাই সেসব মাধ্যমে যখন কোন বৈদেশিক মুদ্রা আসে তখন একজন ফ্রিল্যান্সার ঝামেলায় পড়েন। যেমন অনেকেই পেপাল এর কথা বলে থাকেন। পেপাল এর মাধ্যমে তাদের বৈদেশিক মুদ্রা আসে। কিন্তু বাংলাদেশে কোন ব্যাংকের সাথে তাদের চুক্তি না থাকার কারনে সেই টাকা তুলতে সমস্যা হয়।

গত মার্চ মাসে খবর বেরিয়েছিলো সোনালি ব্যাংক লিমিটেড এর সাথে পেপাল এর চুক্তি হতে যাচ্ছে। এর ফলে যারা এর মাধ্যমে টাকা নিয়ে আসবেন তারা খুব সহজেই এই টাকা নিজের ব্যাংকের মাধ্যমে তুলতে পারবেন। তখন শোনা  গিয়েছিলো গত এপ্রিল মাসের শেষের দিকে তারা সেবা দিতে পারবে। কিন্তু জুলাই মাস চলে গেলেও তাদের অগ্রগতি কতোটুকু হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের পরে বৈধ পথে সে অর্থ নিয়ে আসতে না পারলে পরে আইনি ঝামেলায় পড়তে হতে পারে সেই ভয়ে অনেকেই থাকেন। কিন্তু উপার্জিত অর্থ না এনেও উপায় নেই। তখন তারা কি করবেন? এই চিন্তায় থাকেন অনেকেই। আবার অবৈধ পথে টাকা নিয়ে আসলে যেমন ঝুকি থাকে তেমনি আয়কর বিবরণীতে দেখানোর কোন উপযুক্ত খাতও খুজে পান না। এবং সেই আয় থেকে আয়কর সুবিধাও নিতে পারেন না।

যেমন প্রায়ই শুনে থাকি হুন্ডির কথা। এটা অবৈধ। কিন্তু তারপরও এটা হয়েই যাচ্ছে। এইগুলো বন্ধ করার জন্য সরকারকে বৈধ পথ খুলে দিতে হবে। সহজতর এবং দ্রুত করতে হবে। আর রেমিটেন্স পাঠানোর খরচ কমাতে হবে। সরকার গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদেরকে নগদ প্রণোদনা দিয়ে থাকে। ফরেন রেমিটেন্স রিজার্ভ ভালো রাখার জন্য সরকার এই কাজ করে থাকে। এখন যারা বিদেশে কাজ করেন বা বাংলাদেশে থেকে অনলাইনে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে নিয়ে এসে ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ বাড়াচ্ছেন তাদেরকে কেনো উল্টো টাকা খরচ করে দেশে পাঠাতে হবে? এই প্রশ্ন করতেই পারেন।

কিভাবে উপার্জিত অর্থ দেশে নিয়ে আসবেন

আয়কর অব্যাহতি পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে দেশে নিয়ে আসতে হবে। তবে অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন টাকা ব্যাংক থেকে তুলতে গেলে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হন। কেন টাকা এসেছে? কোথা থেকে এসেছে? কে পাঠিয়েছে?  এবং বিভিন্ন ধরনের কাগজ পত্র চেয়ে থাকে ব্যাংক।এটার কারন হলো বর্তমানে বিভিন্ন দেশে জঙ্গি অর্থায়ন রুখতে এই ধরনের কিছু বাড়তি নিরাপত্তা নিয়ে থাকেন ব্যাংকাররা। তাই যারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন তারা আগে থেকেই যোগাযোগ করে নিতে পারেন যারা আগে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন তাদের কাছ থেকে। তারা কোন ব্যাংকের সাথে লেনদেন করছেন। টাকা তুলতে গেলে কি কি কাগজপত্র প্রমাণ হিসেবে দেখাতে হবে এগুলো জেনে নিন।  তাহলে বারবার টাকা তোলার জন্য দৌড়াতে হবে না।

যেহেতু বাংলাদেশে প্রচুর ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করছেন এবং বিশাল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা দেশে নিয়ে আসছেন তাই ব্যাংকগুলোও এই ব্যাপারে একটা গাইডলাইন দিতে পারে। তারা বলে দিতে পারে কি কি কাগজ পত্র লাগবে তা সঙ্গে নিয়ে আসার জন্য।

ফ্রিল্যান্সিং আয়ের উপর আয়কর দিতে হবে কিনা?

এখন আপনি টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিজের কাছে নিয়ে এসেছেন অথবা ব্যাংকে জমা রয়ে গেছে।  এরপর প্রশ্ন আসে আপনাকে এই আয়ের উপর কোন আয়কর দিতে হবে কিনা?  অথবা  আয়কর বিবরণীতে দেখাতে হবে কিনা?

বাংলাদেশে আইটি খাতকে প্রমোট করার জন্য সরকার বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিয়ে আসছেন আয়করের ক্ষেত্রে।  যারা ব্যবসা করে থাকেন আইটি ক্ষেত্রে তাদের আয়কে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আয়কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ব্যবসা থেকে আয়ের উপর আয়কর দিতে হবে না।

তবে কোন কোন খাত এই সুবিধা পাবে তার একটি লিস্ট রয়েছে  যার মধ্যে ২২টি খাতকে এই সুবিধা দেয়া হয়েছে। তবে তাদেরকে আয়কর বিবরণী জমা দিয়ে যেতে হবে। আর যারা ব্যাক্তিগতভাবে নিজে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকেন তাদের সেই আয়কেও কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। যেহেতু ফ্রিল্যান্সার নিজেই একা কাজ করে থাকেন এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দেশে নিয়ে আসেন তাই তাকেও এই আয়ের উপর কোন আয়কর দিতে হবে না। তবে এখানে অবশ্যই মনে রাখতে হবে ফ্রিল্যান্সিং থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশের প্রচলিত আইন মেনে বৈধ পথে দেশে নিয়ে আসতে হবে। এখানে ব্যাংকিং চ্যানেলকেই আমরা বৈধ পথ বলে বুঝে থাকি।

তাই চেষ্টা করুন আপনার ফ্রিল্যান্সিং থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকের মাধ্যমে নিয়ে আসতে তাহলে আপনাকে আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে না এবং সাথে আয়কর অব্যাহতিও পাবেন।

ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয় কোথায় দেখাবেন?

আয়কর বিবরণীতে মোট দশটি খাত রয়েছে। এই খাত অনুযায়ী আপনাকে আয় দেখাতে  হবে। কোন কোন খাতে মোট কতো টাকা বছরব্যাপি আয় করেছেন তা দেখাতে হয়। একটি খাত আছে ফরেন ইনকাম। এই খাতে আপনি বিদেশ থেকে সারা বছর যতো বৈদেশিক মুদ্রা দেশে নিয়ে এসেছেন তা দেখাতে হবে।

আয়কর বিবরণী জমা দিতে হবে কি?

আপনি ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয়ের উপর কর অব্যাহতি পেলেও আপনাকে এটা আয়কর বিবরণীতে দেখাতে হবে। আপনাকে শুধু ফ্রিল্যান্সিং আয়ের বাইরে যে আয় থাকবে শুধুমাত্র সেই আয়ের উপর আয়কর দিতে হবে। সেই আয়করও আপনি সঠিকভাবে ট্যাক্স প্ল্যানিং করে আপনার আয়কর প্রায় অর্ধেক হ্রাস করতে পারেন।

আপনি আয়কর বিবরণী আগে জমা দিয়ে না থাকলে অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নিতে পারেন। আবার খুব সহজেই অনলাইনে সফটওয়্যার নির্ভর ওয়েবসাইটের সাহায্যও নিতে পারেন।